Category: History

টাকা-পয়সা-পতাকায় একই সৌধ, ভারতীয়ের স্থাপত্য যে দেশের ঐতিহ্য

কয়েন, নোট ও জাতীয় পতাকায় একই সৌধের ছবি। বিশ্বে এমন দৃষ্টান্ত মাত্র দু’টি দেশে ছিল। এর মধ্যে একটি দেশ কিছুদিন আগে পতাকা বদল করায়, এখন এমন একটিমাত্র দেশ রয়েছে যাদের টাকা-পয়সা তো বটেই, জাতীয় পতাকাতেও রয়েছে সৌধের ছবি। সেই সৌধ গড়েছিলেন ভারতীয় রাজা দ্বিতীয় সূর্যবর্মণ, দ্বাদশ শতকে। আয়তনের নিরিখে বিশ্বের সবচেয়ে বড় ধর্মস্থান এটিই। আজকের পর্বে সেই হারানো ঐতিহাসের কথা, যার প্রতি পরতে জড়িয়ে ভারতের ঐতিহ্য।

কাম্বোডিয়ার জাতীয় পতাকা

কয়েক দশক আগেও বিশ্বের বহু তাবড় জাদুঘরে ভারতীয় বীথি বা ইন্ডিয়ান গ্যালারি বলতে শুধু ভারত নয়, বোঝানো হত দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সংস্কৃতি ধরা রয়েছে এমন গ্যালারিকে। বিশ্বায়নের যুগে ভারতের ক্ষেত্রে উল্টোটা ঘটেছে। ছোট হয়ে গেছে পরিসীমা, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া পেয়েছে আলাদা সংজ্ঞা।

দাক্ষিণাত্যের চোড় রাজাদের দাপট শুধু স্থলেই সীমাবদ্ধ ছিল না, চম্পা রাজ্যের সহায়তায় একাধিকবার তারা সমুদ্রে অভিযান করেছে। শেষে সাতশো নৌবহর নিয়ে আক্রমণ করে রাজ্য স্থাপনও করেছে বঙ্গোপসাগরের ওপারে। সেখানেই রাজা দ্বিতীয় সূর্যবর্মণ গড়ে তোলেন বিশ্বের সবচেয়ে বড় মন্দির। ১১১১-১৩ থেকে শুরু হয়ে মন্দির নির্মাণ শেষ হয় ১১৫০ সালে। জায়গাটির নাম হয়ে যায় মন্দির-শহর, খমের ভাষায় আঙ্কোর ওয়াট। অধুনা কাম্বোডিয়া তো বটেই, গিনেস রেকর্ড বই অনুযায়ী বিশ্বের সবচেয়ে বড় ধর্মস্থল এটিই। মন্দির নির্মাণ শেষ হওয়ার পাঁচ বছর আগেই প্রয়াত হন দ্বিতীয় সূর্যবর্মণ। আরও পঞ্চাশ বছরের মধ্যে এই মন্দির ধীরে ধীরে হয়ে যায় বৌদ্ধ ধর্মের উপাসনাস্থল।

কালের নিয়মে কার্যত ধ্বংস হতে বসে এই মন্দির। বিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিক থেকে শুরু হয় নতুন করে সংরক্ষণ ও রক্ষণাবেক্ষণ। তবে তার অনেক আগে, ১৮৫০-এর দশকে কাম্বোডিয়া নতুন জাতীয় পতাকা তৈরি করলে তার মাঝে চিহ্ন হিসাবে আঁকা হয় আঙ্কোর ওয়াটের ছবি। এর আগে বিশ্বে আর কোথাও এমনটি হয়েছে কিনা তা আমার জানা নেই। কাম্বোডিয়ার ইতিহাসে নানা শক্তির উত্থান-পতন হয়েছে। উপনিবেশ, সাময়িক অধিগ্রহণ ও কমিউনিস্ট শাসনের সাক্ষী থেকেছে এই দেশ। অন্য কমিউনিস্ট দেশের সঙ্গে এই দেশের পার্থক্য হল, এখানের পতাকায় রয়ে গেছে আঙ্কোর ওয়াটের ছবি। এটি তাদের বহুত্ববাদ, সম্প্রীতি ও ঐতিহ্যের স্মারক হিসেবে স্বীকৃতি পেয়ে এসেছে চিরকাল। তাই অল্প সময়ের একটি ব্যতিক্রম ছাড়া কাম্বোডিয়ার পতাকায় রয়ে গেছে এই সৌধের ছবি।

১৯৯৪ সালের ১০০ রিয়েল মুদ্রায় আঙ্কোর ওয়াটের ছবি রয়েছে। একাধিক নোটে রয়েছে আঙ্কোর ওয়াটের ছবি।

১৯৭২-৭৩ সালের ১০০০ রিয়েল নোটে যে পাথরের মুখ রয়েছে সেটি তা সোম মন্দিরের গম্বুজ থেকে নেওয়া। শিকড়ে ভরে যাওয়া ভগ্নপ্রায় তা সোম মন্দির সংরক্ষণ করেছে সে দেশের সরকার। ২০০২, ২০০৪ ও ২০১৪ সালে প্রকাশিত ৫০০ রিয়েল মুদ্রায় যেভাবে মন্দিরের ছবি ছাপা হয়েছে অনেকটা সেই রকমই রয়েছে পতাকায়। মুদ্রায় ব্যবহার হওয়া এই দু’টিই আঙ্কোর ওয়াট মন্দিরের।

চোড়দের যে ইতিহাস ছড়িয়ে রয়েছে দক্ষিণপূর্ব এশিয়ায়, ১০৮৮ সালে তার সূচনা করেছিলেন রাজেন্দ্র চোড়। তিনি চিনের রাজার কাছে নিজের দূত পাঠিয়েছিলেন। তাঁর উত্তরপুরুষরা সেই ধারা বজায় রেখেছিলেন। তিনি দক্ষিণপূর্ব এশিয়া আক্রমণ করেছিলেন। আরও পরে এই জায়গা আক্রমণ করেছেন দ্বিতীয় সূর্যবর্মণ। তবে কোনও ভারতীয় রাজাই সেভাবে এখানে সাম্রাজ্য বিস্তার করতে পারেননি যেভাবে গ্রিকরা এশিয়ার বড় অংশে সাম্রাজ্য বিস্তার করেছিল বা ইউরোপের নানা শক্তি এশিয়া-আফ্রিকা জুড়ে উপনিবেশ স্থাপন করেছিল। তাও সাগর পেরিয়ে এত অল্প সময়ের জন্য রাজত্ব করেও অনন্য কীর্তি স্থাপন করেছিলেন এক ভারতীয় রাজা। অনন্য, কারণ তা স্থান করে নিয়েছে পতাকায়। তাই এটি যেকোনও ভারতীয়র কাছে গর্বেরও বটে।

লেখাটি প্রথম প্রকাশিত হয় কাঞ্জিক পত্রিকায়

অলঙ্কারে বেঁচে এলডোরাডো, হারিয়েছে ভাষা

কলম্বিয়া বলতে প্রথমেই যে দুটো শব্দ মনে আসে তা হল ভালদেরামা ও হিগুইতা। আর তৃতীয় শব্দটি এস্কোবার। তিনজন ফুটবলারের নাম। তাদের ফুটবল উন্মাদনা আসলে ইউরোপীয়দের দান। তার বিনিময়ে বলি দিতে হয়েছে জেনুকে। জেনু কোনও ব্যক্তির নাম নয়, এ এক সভ্যতার নাম যার ব্যাপ্তি ছিল ২০০ … Continue reading অলঙ্কারে বেঁচে এলডোরাডো, হারিয়েছে ভাষা

শতবর্ষে মহেঞ্জোদাড়ো আবিষ্কার, অবহেলায় ধ্বংস হচ্ছে স্থাপত্য-নিদর্শন

অ্যানাগ্লিফস; অ্যান্ড ওয়ান্ডারফুল আর্কিওলজিক্যাল ডিসকভারিজ। ১৯২৪ সালের ২০ সেপ্টেম্বর দ্য ইলাস্ট্রেটেড লন্ডন নিউজের মাস্ট হেডের উপরে এই কথাটি লেখা ছিল। চারপাতার প্রতিবেদনে লেখার চেয়ে ছবিই ছিল বেশি, যাকে ক্যাপশন স্টোরি বললে একেবারেই অত্যুক্তি হবে না। প্রতিবেদনের প্রথম পৃষ্ঠায় ভারতীয় পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণের তৎকালীন মহানির্দেশক স্যার জন … Continue reading শতবর্ষে মহেঞ্জোদাড়ো আবিষ্কার, অবহেলায় ধ্বংস হচ্ছে স্থাপত্য-নিদর্শন

দিদারগঞ্জের সেই যক্ষী

এই হাসির সঙ্গে কার যেন একটা মিল আছে। কিছুতেই মনে পড়ছে না উদ্ভাসের। সন্ধ্যায় হোটেলে ফিরে বিছানায় গা এলিয়ে দিয়ে ভাবতে থাকে নানা কথা। মনে হতে থাকে কেমন ছিল সেই সময়টা? যদি একবার কোনও যন্ত্র সেই সময়টা ফিরিয়ে দেখাতে পারত। কিন্তু সে আর কী করে সম্ভব!
রাতের খাবার খেয়ে আলো নিভিয়ে শুয়ে পড়ে। আলো নিভিয়ে দিয়ে চোখ বুজতেই আবার দেখতে পায় সেই হাসি। ঠিক তার দিকে তাকিয়ে হাসছিল এমন নয়, তবুও এই হাসি কোথায় যেন দেখেছে। খুব চেনা।
রাজেন্দ্রনগর জায়গাটা এখন জমজমাট হয়ে যাওয়ার পরে পাটনা থেকে বেশ কিছুটা দূরে ফাতুহায় স্যাটেলাইট সিটি গড়ছে বিহার সরকার। গঙ্গার ধারে। সেই ফাতুহাতে দিদারগঞ্জ নামে একটা জায়গা আছে। আজ থেকে পাঁচ হাজার বছর আগে কেমন ছিল জায়গাটা? মনে মনে নানা ছবি আঁকতে থাকে।
দিদারগঞ্জ। সমৃদ্ধ এক জায়গা। কসবা বলা যায় কিনা কে জানে। গঙ্গার তীরে স্থানীয় একজনের লাঠিতে শক্ত কিছু একটা ঠেকেছিল। উৎখনন বলতে যে বিশাল কর্মযজ্ঞের কথা বোঝানো হয় তেমন কিছু করতে হয়নি। মাটির নীচে চার হাজার বছর ধরে ঘুমিয়ে থাকা যক্ষী সেদিন জেগে উঠেছিলেন। কার সম্পত্তি তিনি পাহারা দিচ্ছিলেন? কে তাঁকে যখ করে রেখেছিলেন? সে সব কথা জানার আর কী কোনও উপায় আছে? নাহ! দিদারগঞ্জে একাই মাটির নীচে ছিলেন তিনি। কেন ছিলেন, কবে থেকে ছিলেন সে কথা জানার উপায় নেই। ইএইচএস ওয়ালশের চিঠিতে এত কথা লেখা নেই। পাটনার তৎকালীন কমিশনার ওয়ালেশ শুধু লিথেছেন, গুলাম রসুল নামে স্থানীয় এক বাসিন্দার থেকে জানা যায় মাটির নীচে শক্ত একটা বেদী আছে। ১৯১৭ সালের ১৮ অক্টোবর সেটা বের করে আনা হয়। অনেক দেখে পণ্ডিতরা মেনে নেন এটি মৌর্য যুগেই তৈরি।
মৌর্য যুগের যে সব মূর্তি পাওয়া গেছে সেগুলো সবই এমন চকচকে যেন মাছি বসলে পিছলে যাবে। তবে ১৬০ সেন্টিমিটার মাপের নারীমূর্তি! এমনটা আর পাওয়া যায় না। প্রমাণ মাপের পূর্ণ অবয়ব নারীমূর্তির বিচারে ইনিই প্রাচীনতমা। একাধারে সেবা, সৌন্দর্য ও মাতৃত্বের প্রতিমূর্তি।

পাটনা জাদুঘরে ঢোকার সময় পুরাতত্ত্বের এক ছাত্রের সঙ্গে আলাপ হয়েছিল উদ্ভাসের। খানিকটা যেচেই আলাপ করেছিল। নামটা… নামটা বলেছিলেন, তবে এখন মনে করতে পারছে না। তিনিই চিনিয়ে দিয়েছিলেন মূর্তিটা। পাল-সেন যুগের মূর্তির মধ্যে যে অসংখ্য কারুকাজ সে দেখেছে, এই মূর্তিতে সেসব নেই। তবে এই মূর্তির একটা অন্য ভাব আছে। সেটা সে মূর্তি দেখেই বুঝেছিল। ডান হাতে ধরে থাকা চামরটা কাঁধের উপরে ফেলা, যেন তিনি সেবা করার জন্য প্রস্তুত। কপালে টিকলি, কানে দুল, গলায় মুক্তোর মালা, কোমরে মেখলা, হাতে বালা আর পায়ে… না একে মোটেই নূপুর বলা যায় না, ঘুঙুরও নয়। পশ্চিম ভারতের আদিবাসীদের পায়ে যেমন অলঙ্কার থাকে অনেকটা তেমন। নাকেও কি কিছু ছিল? নথ, নোলক আর নাকছাবির মধ্যে কোনও একটা? না, সেটা জানার উপায় নেই। যক্ষীর নাক আর বাঁহাত নেই। মূর্তিটা এমন ভাবেই পাওয়া গেছে।
ওই ছাত্রের সঙ্গে আলাপ করে ভালই হয়েছিল উদ্ভাসের। নারীমূর্তির নাভির নীচে দুটো দাগ দেখিয়ে দিয়েছিল। বলেছিল, সন্তান প্রসবের পরে এমন দাগ হয়। আর দেখিয়ে দিয়েছিল ওই যক্ষীর স্তনযুগল। ডানদিকেরটা সামান্য বড় বাঁদিকের তুলনায়। বাঁদিকে মন থাকে, তাই স্তন্যপান করানো মায়ের ডান দিকের স্তন নাকি সামান্য বড় হয়ে যায়। একথা উদ্ভাসের জানা ছিল না। মনটা শ্রদ্ধার ভরে ওঠে যিনি এমন মূর্তি বানিয়েছিলেন তাঁর প্রতি। কী নিখুঁত তাঁর দৃষ্টি, কী অপূর্ব তাঁর দর্শন।
সে যুগে কি মন্দির ছিল? মানে মৌর্য যুগে? কে জানে। তখন তো যাগযজ্ঞই হত। মন্দির থাকলে হয়তো অমরাবতী বা ভারহুতের মতো এই যক্ষীকেও সেঁটে দেওয়া হত দেওয়ালে। তাতে মূর্তির পিছনের দিকটা আর তৈরি করার দরকার হত না। তখন নিশ্চয়ই মন্দির ছিল না। আচ্ছা, তাহলে এই মূর্তি আসলে রাখা ছিল কোথায়? রাজবাড়ির প্রধান ফটকে? এখানে কে রাজা ছিলেন?
দিদারগঞ্জে রামেরা চার ভাই এসেছিলেন বলে রামায়ণে বলা আছে। না, ঠিক দিদারগঞ্জ বলে উল্লেখ নেই, জায়গাটা ফাতুহার মধ্যেই যখন, তখন হতেই পারে এই দিদারগঞ্জেই এসেছিলেন তাঁরা। এখানেই আযোধ্যার চার ভাই মানে তাঁদের চার হবু জামাইকে আপ্যায়ন করেছিলেন জনকরাজা ও তাঁর ভাই। চোখের সামনে যেন ভেসে উঠতে থাকে রামায়ণের কাল্পনিক দৃশ্যপট। ভীম আর অর্জুনকে নিয়ে সেখানে হাজির হন স্বয়ং বাসুদেব কৃষ্ণ। তাঁরা যাচ্ছেন জরাসন্ধকে বধ করতে। এখান থেকে সেই জায়গাটাও খুব একটা দূরে নয়। সেই জায়গাটাও সম্প্রতি দেখেছে উদ্ভাস, গৃধ্নকূট থেকে ফেরার সময়। সে দেখতে পাচ্ছে জরাসন্ধের সঙ্গে ভীমের সেই যুদ্ধ, মগধের রাজা জরাসন্ধের শরীরটা চিরে ফেলছেন ভীম। তবুও তার মধ্যে কোনও নৃশংসতা নেই। এখানেই বোধ হয় মহাকাব্যের সার্থকতা।
ঘুম ভেঙে যায় উদ্ভাসের। এতকিছুর মধ্যেও হাসিটা সে ভুলতে পারছে না।
পরের দিন আবার যায় পাটনা মিউজিয়ামে। মূল ঘরের ঠিক মাঝখানে রাখা আছে সেই যক্ষীমূর্তি যা দিদারগঞ্জ যক্ষী নামে পরিচিত। এই মূর্তিটার কথা সে শুনেছে অনেক বার। অনেকের কাছে। এটা দেখতেই সে পাটনায় এসেছে, ইতিহাসের পাটলিপুত্রে। যক্ষীর মূর্তির দিকে তাকিয়ে থাকে। দেখতে থাকে তাঁর মুখমণ্ডল। চোখ, ভেঙে যাওয়া নাক, টিকলি। মনে হতে থাকে, ল্যুভর মিউজিয়ামে অনেকে তো যান শুধুমাত্র মোনালিসা দেখতে। এখানে কেন তেমন ভাবে লোকে আসেন না? একটা তাজমহল দেখতে লোকে যদি আগ্রায় যেতে পারে তাহলে কেন দিদারগঞ্জ যক্ষী দেখতে পাটনায় আসবে না?
এতক্ষণে অস্বস্তি কাটে। ঠিকই তো। এই হাসির সঙ্গে মিল রয়েছে মোনালিসার হাসির। মনের মধ্যে যখন তোলপাড় হচ্ছিল তখন সেই হাসিটার মধ্যে কেমন যেন একটা উদ্বেগ, দুঃখ মিশে ছিল। নিজের মনটা প্রশান্তিতে ভরে যেতে সে দেখল হাসিটা মোটেই দুঃখের নয়, আনন্দের।
সবকিছু সরল করে ফেলা যায় না। তবু তার মনে হয়, মোনালিসা ইউরোপের বলেই অত কদর। দিদারগঞ্জের যক্ষী সুদূর স্মিথসোনিয়ানে গেলেও এদেশে তার কদর কোথায়! কজন দেখেছে সেই মায়াময় হাসি? সে দেখেছে, উপভোগ করেছে। এখানেই তার প্রশান্তি।

এটা প্রথম প্রকাশিত হয়েছে পুজোসংখ্যা ১৪২৭-এ

আমার অন্য লেখা: Coffee and cacophony: Kolkata’s College Street secret brewing for ages

দিদারগঞ্জের সেই যক্ষী

এই হাসির সঙ্গে কার যেন একটা মিল আছে। কিছুতেই মনে পড়ছে না উদ্ভাসের। সন্ধ্যায় হোটেলে ফিরে বিছানায় গা এলিয়ে দিয়ে ভাবতে থাকে নানা কথা। মনে হতে থাকে কেমন ছিল সেই সময়টা? যদি একবার কোনও যন্ত্র সেই সময়টা ফিরিয়ে দেখাতে পারত। কিন্তু সে আর কী করে সম্ভব!
রাতের খাবার খেয়ে আলো নিভিয়ে শুয়ে পড়ে। আলো নিভিয়ে দিয়ে চোখ বুজতেই আবার দেখতে পায় সেই হাসি। ঠিক তার দিকে তাকিয়ে হাসছিল এমন নয়, তবুও এই হাসি কোথায় যেন দেখেছে। খুব চেনা।
রাজেন্দ্রনগর জায়গাটা এখন জমজমাট হয়ে যাওয়ার পরে পাটনা থেকে বেশ কিছুটা দূরে ফাতুহায় স্যাটেলাইট সিটি গড়ছে বিহার সরকার। গঙ্গার ধারে। সেই ফাতুহাতে দিদারগঞ্জ নামে একটা জায়গা আছে। আজ থেকে পাঁচ হাজার বছর আগে কেমন ছিল জায়গাটা? মনে মনে নানা ছবি আঁকতে থাকে।
দিদারগঞ্জ। সমৃদ্ধ এক জায়গা। কসবা বলা যায় কিনা কে জানে। গঙ্গার তীরে স্থানীয় একজনের লাঠিতে শক্ত কিছু একটা ঠেকেছিল। উৎখনন বলতে যে বিশাল কর্মযজ্ঞের কথা বোঝানো হয় তেমন কিছু করতে হয়নি। মাটির নীচে চার হাজার বছর ধরে ঘুমিয়ে থাকা যক্ষী সেদিন জেগে উঠেছিলেন। কার সম্পত্তি তিনি পাহারা দিচ্ছিলেন? কে তাঁকে যখ করে রেখেছিলেন? সে সব কথা জানার আর কী কোনও উপায় আছে? নাহ! দিদারগঞ্জে একাই মাটির নীচে ছিলেন তিনি। কেন ছিলেন, কবে থেকে ছিলেন সে কথা জানার উপায় নেই। ইএইচএস ওয়ালশের চিঠিতে এত কথা লেখা নেই। পাটনার তৎকালীন কমিশনার ওয়ালেশ শুধু লিথেছেন, গুলাম রসুল নামে স্থানীয় এক বাসিন্দার থেকে জানা যায় মাটির নীচে শক্ত একটা বেদী আছে। ১৯১৭ সালের ১৮ অক্টোবর সেটা বের করে আনা হয়। অনেক দেখে পণ্ডিতরা মেনে নেন এটি মৌর্য যুগেই তৈরি।
মৌর্য যুগের যে সব মূর্তি পাওয়া গেছে সেগুলো সবই এমন চকচকে যেন মাছি বসলে পিছলে যাবে। তবে ১৬০ সেন্টিমিটার মাপের নারীমূর্তি! এমনটা আর পাওয়া যায় না। প্রমাণ মাপের পূর্ণ অবয়ব নারীমূর্তির বিচারে ইনিই প্রাচীনতমা। একাধারে সেবা, সৌন্দর্য ও মাতৃত্বের প্রতিমূর্তি।


পাটনা জাদুঘরে ঢোকার সময় পুরাতত্ত্বের এক ছাত্রের সঙ্গে আলাপ হয়েছিল উদ্ভাসের। খানিকটা যেচেই আলাপ করেছিল। নামটা… নামটা বলেছিলেন, তবে এখন মনে করতে পারছে না। তিনিই চিনিয়ে দিয়েছিলেন মূর্তিটা। পাল-সেন যুগের মূর্তির মধ্যে যে অসংখ্য কারুকাজ সে দেখেছে, এই মূর্তিতে সেসব নেই। তবে এই মূর্তির একটা অন্য ভাব আছে। সেটা সে মূর্তি দেখেই বুঝেছিল। ডান হাতে ধরে থাকা চামরটা কাঁধের উপরে ফেলা, যেন তিনি সেবা করার জন্য প্রস্তুত। কপালে টিকলি, কানে দুল, গলায় মুক্তোর মালা, কোমরে মেখলা, হাতে বালা আর পায়ে… না একে মোটেই নূপুর বলা যায় না, ঘুঙুরও নয়। পশ্চিম ভারতের আদিবাসীদের পায়ে যেমন অলঙ্কার থাকে অনেকটা তেমন। নাকেও কি কিছু ছিল? নথ, নোলক আর নাকছাবির মধ্যে কোনও একটা? না, সেটা জানার উপায় নেই। যক্ষীর নাক আর বাঁহাত নেই। মূর্তিটা এমন ভাবেই পাওয়া গেছে।
ওই ছাত্রের সঙ্গে আলাপ করে ভালই হয়েছিল উদ্ভাসের। নারীমূর্তির নাভির নীচে দুটো দাগ দেখিয়ে দিয়েছিল। বলেছিল, সন্তান প্রসবের পরে এমন দাগ হয়। আর দেখিয়ে দিয়েছিল ওই যক্ষীর স্তনযুগল। ডানদিকেরটা সামান্য বড় বাঁদিকের তুলনায়। বাঁদিকে মন থাকে, তাই স্তন্যপান করানো মায়ের ডান দিকের স্তন নাকি সামান্য বড় হয়ে যায়। একথা উদ্ভাসের জানা ছিল না। মনটা শ্রদ্ধার ভরে ওঠে যিনি এমন মূর্তি বানিয়েছিলেন তাঁর প্রতি। কী নিখুঁত তাঁর দৃষ্টি, কী অপূর্ব তাঁর দর্শন।
সে যুগে কি মন্দির ছিল? মানে মৌর্য যুগে? কে জানে। তখন তো যাগযজ্ঞই হত। মন্দির থাকলে হয়তো অমরাবতী বা ভারহুতের মতো এই যক্ষীকেও সেঁটে দেওয়া হত দেওয়ালে। তাতে মূর্তির পিছনের দিকটা আর তৈরি করার দরকার হত না। তখন নিশ্চয়ই মন্দির ছিল না। আচ্ছা, তাহলে এই মূর্তি আসলে রাখা ছিল কোথায়? রাজবাড়ির প্রধান ফটকে? এখানে কে রাজা ছিলেন?
দিদারগঞ্জে রামেরা চার ভাই এসেছিলেন বলে রামায়ণে বলা আছে। না, ঠিক দিদারগঞ্জ বলে উল্লেখ নেই, জায়গাটা ফাতুহার মধ্যেই যখন, তখন হতেই পারে এই দিদারগঞ্জেই এসেছিলেন তাঁরা। এখানেই আযোধ্যার চার ভাই মানে তাঁদের চার হবু জামাইকে আপ্যায়ন করেছিলেন জনকরাজা ও তাঁর ভাই। চোখের সামনে যেন ভেসে উঠতে থাকে রামায়ণের কাল্পনিক দৃশ্যপট। ভীম আর অর্জুনকে নিয়ে সেখানে হাজির হন স্বয়ং বাসুদেব কৃষ্ণ। তাঁরা যাচ্ছেন জরাসন্ধকে বধ করতে। এখান থেকে সেই জায়গাটাও খুব একটা দূরে নয়। সেই জায়গাটাও সম্প্রতি দেখেছে উদ্ভাস, গৃধ্নকূট থেকে ফেরার সময়। সে দেখতে পাচ্ছে জরাসন্ধের সঙ্গে ভীমের সেই যুদ্ধ, মগধের রাজা জরাসন্ধের শরীরটা চিরে ফেলছেন ভীম। তবুও তার মধ্যে কোনও নৃশংসতা নেই। এখানেই বোধ হয় মহাকাব্যের সার্থকতা।
ঘুম ভেঙে যায় উদ্ভাসের। এতকিছুর মধ্যেও হাসিটা সে ভুলতে পারছে না।
পরের দিন আবার যায় পাটনা মিউজিয়ামে। মূল ঘরের ঠিক মাঝখানে রাখা আছে সেই যক্ষীমূর্তি যা দিদারগঞ্জ যক্ষী নামে পরিচিত। এই মূর্তিটার কথা সে শুনেছে অনেক বার। অনেকের কাছে। এটা দেখতেই সে পাটনায় এসেছে, ইতিহাসের পাটলিপুত্রে। যক্ষীর মূর্তির দিকে তাকিয়ে থাকে। দেখতে থাকে তাঁর মুখমণ্ডল। চোখ, ভেঙে যাওয়া নাক, টিকলি। মনে হতে থাকে, ল্যুভর মিউজিয়ামে অনেকে তো যান শুধুমাত্র মোনালিসা দেখতে। এখানে কেন তেমন ভাবে লোকে আসেন না? একটা তাজমহল দেখতে লোকে যদি আগ্রায় যেতে পারে তাহলে কেন দিদারগঞ্জ যক্ষী দেখতে পাটনায় আসবে না?
এতক্ষণে অস্বস্তি কাটে। ঠিকই তো। এই হাসির সঙ্গে মিল রয়েছে মোনালিসার হাসির। মনের মধ্যে যখন তোলপাড় হচ্ছিল তখন সেই হাসিটার মধ্যে কেমন যেন একটা উদ্বেগ, দুঃখ মিশে ছিল। নিজের মনটা প্রশান্তিতে ভরে যেতে সে দেখল হাসিটা মোটেই দুঃখের নয়, আনন্দের।
সবকিছু সরল করে ফেলা যায় না। তবু তার মনে হয়, মোনালিসা ইউরোপের বলেই অত কদর। দিদারগঞ্জের যক্ষী সুদূর স্মিথসোনিয়ানে গেলেও এদেশে তার কদর কোথায়! কজন দেখেছে সেই মায়াময় হাসি? সে দেখেছে, উপভোগ করেছে। এখানেই তার প্রশান্তি।

এটা প্রথম প্রকাশিত হয়েছে পুজোসংখ্যা ১৪২৭-এ

আমার অন্য লেখা: Coffee and cacophony: Kolkata’s College Street secret brewing for ages

Coffee and cacophony: Kolkata’s College Street secret brewing for ages

Can someone actually climb a corporate ladder and reach the top starting from a modest background? Only through hardwork? I was wondering as I have come across such stories in Dale Carnegie’s books. Are these mere stories?

No, it’s possible, said Zaheed Hussain. “When I started, I used to wash plates. Then I became a cook, and now I am managing the cash counter,” Zaheed said. Zaheed is an employee of the Indian Coffee House, College Street, Kolkata. His father joined the coffee house in 1953. In 1976, Zaheed joined as a washer boy.

“This is the rule. Whoever joins here joins as a plate washer. Later they can choose their role. There is no gradation of work. We all get equal salaries. And apart from sweeping and floor cleaning, everyone has to do every kind of work,” said Zaheed.

But waiters get tips! So, they can earn more?

“No,” said Zaheed.

“At the end of the day, each and everyone deposits the tips at a single place and divide equally. Remember, it is run by a co-operative, so none enjoys any privilege over another.”

There are 300-odd seats in two floors.

Crowd starts pouring in around afternoon. You will rarely find any seat empty here. Waiters climbing up and down to serve the customers round the clock and various groups of people looking for a place to park themselves present a usual picture.

At one point of a time, the Coffee Board was unwilling to run it. But that never stopped the brewing. A co-operative was formed. With coffee and snacks, it became quite a hotbed for the intellectual brewing of the city.  

Poets, writers, politicians, who are otherwise celebrities, visit the Coffee House like commoners. Charminar (cigarette brand), politics and debate — the three love of Bengalis — got blended with coffee.

“Did anyone from the Coffee House ever engage in politics?” I asked Zaheed.

“No, we never engage ourselves in anything except our duties. We never participated in any conversation. All of the top Bengali intellectuals used to visit this place. Many of them have passed away. I have seen both Jyoti Basu and Buddhadeb Bhattacharya (chief ministers of West Bengal) here.” 

And Manna Dey?

He is the singer who immortalised the iconic Coffee House in his song “Coffee Houser se addata aaj aar nei, kothay hariye gelo sonali bikelgulo sei” (The Coffee House adda (meet-ups) have stopped/ we have lost those golden evenings).

Zaheed Said, “I had seen him twice in this place. We welcomed him and offered snacks. He just accepted one cup of coffee and a sandwich.”

Yes, the adda is no more.

You can’t sit for hours with just a cup of coffee.

Smoking is officially prohibited. But many who believe that an intellectual debate remains half-baked without smoke flout the rules.

Once, the Coffee House was about to be closed. At that time, people who loved the place used to come at night to buy all the unsold cutlets. Those troubled times are now history.

Talking about history, the Albert Hall was established in 1876. Later in 1942, the Coffee House came to existence.

After Independence, the name of the Albert Hall was erased.

The Coffee Board discontinued operations here in 1953.

In 1958, the loss-making Coffee House was closed.

The students of the University of Calcutta and then Presidency College (situated just opposite side of the road) took the initiative to bring it back to life.

Then Chief Minister of West Bengal Dr Bidhan Chandra Roy and educationist Prof Nirmal Chandra Chunder (His son Dr Pratap Chandra Chunder was the education minister in Morarjee Deshai’s Cabinet) took steps to reopen it.

Muni Lal, Chuni Lal, Ramu Babu, Naik Babu, Md Sakib were some of the members of the co-operative, waiter Mantu said.

Zaheed is Sakib’s son.

Bihar-born Zaheed is now a permanent resident of West Bengal. He has some interesting stories of the Naxal Movement. During that unsettling period, the Coffee House came under attack only once. It had to close its doors for a few days. Another occasion when it was shut was a strike called by Mamata Banerjee, then Opposition leader.

Otherwise, it is always open. Seven days a week.

Coffee, pakora and sandwich have been on the menu since inception. Chicken sandwich made a late entry. For a brief period, they used to serve idly and dosa as well. But then cutlet came and remained forever. Chowmein and roll are also available.

Like Manna Dey said in his song, the Coffee House remains the ever-blooming garden. Only the gardeners change.

The tables never fall silent.

The coffee cups are never empty. 

This article was published in DailyO All of the photographs are taken my me.

Read more: Dutch city plan in French Pondicherry and Goddess Kali

An Islamic State and Communal Harmony

Once, like most fairy tales I would like to start this story with this very word, it was a tiny princely state in British Empire but the history dates back to 1454 AD. It was established by Seikh Sadruddin-i-Jahan from modern day Afghanistan. According to a government  site: Malerkoltla, a Muslim State, was ruled by Sherwani of Arab origin (according to latest research done by DNA test by a member of Sherwani family. They belong to Haplogroup J2). Malerkotla State was founded in 1600 It is an historic fact that during the 1947 riots when Punjab was in flames, the state of Malerkotla did not witness a single incident of violence; through its all, it remained a lone island of peace.

maler kotla
A Silver Rupee Coin of Maler Kotla.

Maler and Kotla were two separate villages earlier.

In 1947, it was merged to other states and became a part of Patiala and East Punjab States’ Union. Earlier, the state used to ussue own coins.

Let’s explore the story of harmony. It was 1705. Sahibzada Zorwar Singh and Sahibzada Fateh Singh, the third and fourth sons of Guru Govind Singh, was ordered by the court of Mughal Emperor Auranzeb to be bricked alive. They were only 9 years and five years old at that time. Sher Muhammad Khan, the Nawab of Malerkotla protested the inhumane act but could not stop  the execution. It was the reason why the non-Muslims protected them.

According to 2011 Census, 68.5% of the population is Muslim, 20.71% is Hindu and 9.5% is Sikh. But the tiny state was surrounded by Non-Muslim majority area. So Muslims were not in a position tonattack and as the non-Muslims decided not to attack the Muslims, no violence took place. It became an island of peace.

maler1
Screengrab: google map

1705 is not lone example of execution. In 1872, the British rulers killed 65 Namdhari men and boys without trial.

There was another side of the local history. The first non-cooperation movement was practically started in Punjab by Ram Singh. It was Kuka Movement. Besides Sikhs the movement was later adapted by the Hindus also. Primarily it was a boycott movement but later it turned violent. Ram Singh lost control over the movement and the Sikhs attacked Maler Kotla. In a very simple way, the followers of Ram Singh were called Namdhari. They believed that Guru Govind Singh was the only Guru.

Yes, the state had its own coin. That is the reason why I am interested about the place of 122 square Km and 50 Km away from well known city of Ludhiana.

This princely state issued coins from 1768 to 1908 in the names of Ahmad Ali Khan, Amir Khan, Mahbub Khan, Sikandar Ali Khan and Ibrahim Khan.

The coin shown here was issued by Mahbub Khan in between 1845-1859. Weight is almost 10.5 gram and diameter is 17.80 mm.